কক্সবাজারের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে টেকপাড়া বয়েজ ক্লাব
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

আমার মতে বর্তমানে এ দুর্যোগে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। মূলত সংস্কৃতিই হচ্ছে মিলবার ও মিলাবার প্রশস্থ ক্ষেত্র। গনতান্ত্রিক সংস্কৃতি রাস্ট্রিয় ও সামাজিক ঐক্যের চেয়েও অনেক শক্তিশালী। হয়তো অনেকে প্রশ্ন তুলবেন সংস্কৃতি নিজেই তো বিভিন্ন শ্রেনীর দ্বারা বিভক্ত। এই বিভক্তিকে এক করতে হলে সাংস্কৃতিক আন্দোলন করতে হবে।তাহলেই সাস্কৃতিক ঐক্য গড়ে উঠবে।এই ঐক্য রাজনৈতিক ঐক্য সামাজিক ঐক্যকেও ছাড়িয়ে যাবে।আমাদের একাত্তরের বিজয় ছিল গনতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিজয়। স্বাধীনবাংলা বেতার তা করেছে। সংস্কৃতি রাজনীতিকে সাহায্য করেছে আবার রাজনীতি সংস্কৃতিকে সাহায্য করেছে।যেভাবে একটি গনতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাপনা তৈরী হয়েছিল তা আমরা ধরে রাখতে পারিনি।
বাংলাদেশের দক্ষিনে কক্সবাজার জেলাতেও সাংস্কৃতিক আন্দোলন পিছিয়ে ছিলনা। মূলত স্বাধীনতা আন্দোলনের অনেক আগে থেকে এখানে সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছিলেন। ১৯৬৯ সালের আগে এখানে তেমন কোন সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিলনা। ছিলনা তেমন কোন গান গাওয়ার , কবিতা পড়ার লোক।
তবে এমন একটি সংগঠনের কথা না বললে নয় , তাহলো কক্সবাজারের “টেকপাড়া যুব সংঘ”। ইংরেজিতে এর নাম ছিল “ টেকপাড়া বয়েজ ক্লাব”। প্রতিষ্টিত হয় ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট। টেকপাড়ার কিছু তরুন এই ক্লাবটি গড়ে তোলেছিলেন। অবশ্য বয়েজ ক্লাব টেকপাড়ায় কয়েক জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছিল । দুএক জায়গার কথা আমার মনে আছে। একটা হলো সিরাজ কেরানীর জায়গায় অর্থাৎ বর্তমান মরহুম কাসেম মাস্টারের বাড়ীর সামনে, পরবর্তীতে ম্যালেরিয়া রোডে আরেকটি মরহুম সুলতান মাস্টার নিজের জায়গায় অর্থাৎ সিকদার মহলের সামনে।
মরহুম সুলতান মাস্টার এর জন্য কোন ভাড়া নিতেন না। অত্যন্ত বিদ্যোৎসাহী লোক ছিলেন। তাঁর ছেলে মনজুরুল হাসান, অধ্যাপক আহসানুল করিম, কবি মনোয়ার হাসান এই ক্লাবের বিভিন্ন কর্মকান্ডে পরে অংশ গ্রহন করেছিলেন। এই ক্লাবে শুধু খেলাধুলা নয়, নাটক গান, চুরাপছিশ খেলা(একটি পেয়ালায় কয়েকটি কড়ি দিয়ে খেলতে হতো) দাবার গুটির ছকবাঁধা কাপড়ে গুটি চালাতে হতো। তাছাড়া ছক্কাখেলা, তাস খেলা,পাশা খেলা ইত্যাদি নিয়ে এই ক্লাবটির রমরমা অবস্থা ছিল। সন্ধ্যা নামলেই সবাই উপস্থিত হতো ক্লাবে।
কক্সবাজার স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলার টিমের আয়োজন হতো। তখন খ্যাতনামা কয়েকজন জাতীয় লেবেলের খেলোয়াড় যেমন ছুরত আলম,সুনীল দে,মোহাম্মদ হাসেম যিনি আবদুল্লা কনট্রাকটারের ভাই বয়েজ ক্লাবের হয়ে খেলতেন। এই ক্লাবে কোন রাজনীতি ছিলনা। ভিষন অসাম্প্রদায়িক একটা সংগঠন ছিল এটি। টেকপাড়া প্রাইমারী স্কুলের মাঠে টেকপাড়া যুব সংগঠনের আয়োজনে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হতো নাটক। এর জন্য মহড়া চলতো দু চারমাস আগে থেকে। গভীর রাত পর্যন্ত মহড়া চলতো। নারী চরিত্র থাকলে পুরুষকেই সেই চরিত্র রুপায়ন করতে হতো। নাটকের একমাত্র পরিচালক মরহুম আবদুল হাকিম (অধদা) নিজেই সবকিছু বুঝিয়ে দিতেন। তিনি এমন একজন কুশলী নাট্যকার , তাঁর নির্দ্দেশনা আমাকে এখনো মুগ্ধ করে।
মহড়ায় সাথে থাকতেন এই টেকপাড়ার অন্যতম সংস্কৃতি অনুরাগী পুরুষ আমার ফুফাতো ভাই আবুল পেশকার। তিনি মরহুম এডভোকেট খোরশেদ আলমের বাবা। নাটকের সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান লালদীঘির পাড়স্থ সঙ্গীতায়তনের ওস্তাদ স.ম আবুবক্কর সিদ্দিকী। তখন তো ডিজিটাল কোন পদ্ধতি ছিলনা একমাত্র হারমোনিয়াম, তবলা বাশী এসব নিয়ে আবহ সঙ্গীত তৈরী হতো। মহড়া চলতো গভীর রাত পর্যন্ত। আমি তখন সবেমাত্র কক্সবাজার হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। গাঁয়ের ছেলে, আনারকলি, সিরাজদৌল্লা, মুক্তাহার, নাজেহাল,টিপু সুলতান,দস্যু আকরাম, বোবা কান্না, ঈসাখাঁ, ইরান দুহিতা এই সব নাটক বেশ আগ্রহ সহকারে সবাই গভীর রাত পর্যন্ত দেখতো। গোলাম নবী, কিবরিয়া, নেজাম মাস্টার, কামাল মাস্টার সহ আরো অনেকে এই সব নাটকে অভিনয় করতেন। ১৯৭৩ সালে টেকপাড়া বয়েজ ক্লাবের অধীনে “মীর কাসীম”“ বেদের মেয়ে জোৎস্না” “টিপু সুলতান” মঞ্চস্থ হয় টেকপাড়া প্রাইমারী স্কুলের মাঠে। মাঠে তিল টাই আর নাহিরে অবস্থা।বাশের বেড়া দিয়ে একপাশে মেয়েদের বসতে দেওয়া হতো।পাড়া সব মেয়ে নাটক দেখতে চলে আসতো। পুরুষরা স্কুলের বেঞ্চ নিয়ে বাইরে বসতো।এসব নাট্য মঞ্চায়ন করতে কোন ডেকোরেটর তখন ছিলনা। পাড়ার লোকজন থেকে চৌকি, চেয়ার টেবিল সব নিয়ে মঞ্চ তৈরী হতো। পাড়ার লোকেরা সবাই উদার মন নিয়ে সাহায্য করতো।মঞ্চের ছবি সম্বলিত স্ত্রিন, নাটকের কলাকুশলীদের সাজ সজ্জা,রামু থেকে মেক আপ মেন আনা হতো। সিঁদুর এর সাথে পাউডার ইত্যাদি মিশিয়ে মেকআপ করা হতো। তখন ইলেকট্রিক ছিলনা স্কুলে হ্যাজাক লাইট্ ভাড়া করে আলোর ব্যবস্থা করা হতো।
নাটকের এই আয়োজনে পাড়ার প্রায় লোকেরা রাত দিন খাটতো। নাটক প্রায় দু তিন দিন চলতো। শীত এর রাতে নাটকের প্রদর্শনী শেষ হলে পাড়ার লোকেরা সবাই মিলে কোন একদিন বনভোজনের ব্যবস্থা করতো। কি আনন্দের বনভোজন সে বলা মুশকিল। গ্রামোফোন বাজতো । আমরা সবাই মন দিয়ে শুনতাম। কেউ কাট সংগ্রহে, কেউ ঝরনা থেকে পানি সংগ্রহে যেতো। রান্না হয়ে গেলে সবাই মাটিতে পাটি বিছিয়ে খেতে বসতাম। এসবের মুরব্বি ছিলেন টেকপাড়ার মহরহুম মোহাম্মদ সিদ্দিক যিনি তৎকালীন থিয়েটার নাটকের কর্মী শাহিন এবং বর্তমান রেডিওর উপস্থাপক নাজমুল করিম জুয়েলে বাবা। উনি ঢাকায় আদমজীতে চাকরী শেষে অবসর নিয়ে কক্সবাজার চলে এসেছিলেন । আমার জেটাতো ভাই আবদুল্লাহ কনট্রাকটারের ছোট ভাই মোহাম্মদ আলম নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন এবং তাঁর ভাই মাস্টার তৈয়বও একজন সফল নাট্য কর্মী ছিলেন। আমার আপন জেঠাত ভাই এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ কক্সবাজার বয়েজ ক্লাবের একজন নেতৃত্বস্থানীয় লোক ছিলেন। এসব নাটক , খেলাধুলায় তিনিসহ সবাই বসে এসব সিদ্ধান্ত হতো। তাছাড়া তিনি একজন নামকরা নাট্যকর্মী ছিলেন। তাঁর অভিনীত বেশ কটি নাটক মঞ্চস্থ হয় কক্সবাজার বয়েজ ক্লাবে। এঁরা দুজনেই সফল নাট্য কর্মী ছিলেন।টেকপাড়ার মরহুম গোলাম নবী যিনি ভিলেন চরিত্রে প্রায় অভিনয় করতেন। রাজনীতিবিদ গোলাম কিবরিয়া,বর্তমান হার্বাড কলেজের অধ্যক্ষ আমার জেটাতো ভাই সিরাজুল মোস্তফা গনী, তাঁর ভাগ্নে মোহাম্মদ মুজিব, আমার বড় ভাই ওসমান গনী, মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে লালু যিনি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে চাকরী করতেন,নেজামুল হক যিনি কক্সবাজার কলেজে চাকরী করতেন,পরবর্তীতে পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলেন,তার ভাই বখতিয়ার,আবদুল্লাহ পেশকার,মরহুম কমিশনার আবদুর রশীদ, জাফর আলম যিনি টেকপাড়া তথা বাংলাদেশের কৃতি ফুটবলার জনাব ছুরত আলমের ভাই ছিলেন। ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করতেন।এছাড়া তিনি কৌতুকাভিনয়ে বেশ নাম কুড়িয়েছিলেন। আবু যিনি আনসার ব্যাটেলিয়ন এ ছিলেন ইনি পার্শ চরিত্রে অভিনয় করতেন, কক্সবাজার কলেজের ছাত্রলীগের নেতা মরহুম ছুরত আলম নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন।
মুশতাক আহমেদ একজন সফল ফুটবল খেলোয়াড় কাপ্তাই বিদ্যুত কেন্দ্রে চাকরী করতেন সফল একজন চরিত্রাভিনেতা ছিলেন,তিনি টেকপাড়া প্রাইমারী স্কুলের জায়গার দাতা ফজল বারীর ছেলে ছিলেন, আবদু সাত্তারের ছেলে গোলাম মোস্তফা তৎকালীন এসডিও অফিসে চাকরী করতেন, একজন পার্শ চরিত্রাভিনেতা ছিলেন, আবদুল হাকিম ওরফে কালা মিয়া যিনি সরকারী তথ্য অফিসে চাকরী করতেন একজন সফল পার্শ চরিত্রাভিনেতা ছিলেন। দলিলুর রহমান যিনি আনসার কমান্ডার এবং কোর্টের মুনশি ছিলেন।তিনি ঐতিহাসিক নাটকে ভালো অভিনয় করতেন। তাছাড়া কক্সবাজার সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যাপক আমার বিশিষ্ট বন্ধু বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মরহুম আহসানুল করিম নারী চরিত্র ভালো অভিনয় করতেন। তিনি টেকপাড়ার বিশিষ্ট সমাজ কমী সুলতান মাস্টারের ছেলে ছিলেন। আমি যাঁদের নাম উল্লেখ করেছি এদের কারো নাটকের বিষয়ে প্রশিক্ষন ছিলনা। মনের আবেগ দিয়েই তারা অভিনয় করতেন।
আগেই বলেছি পাড়ার শ্রদ্ধেয় আবদুল হাকীম (অধ) যিনি নাটকের নির্দ্দেশনা দিতেন। ইনি কক্সবাজার ফুড অফিসে কাজ করতেন। টেকপাড়া বয়েজ ক্লাবে যতো নাটক সব তিনিই নির্দ্দেশনা দিয়েছেন। ১৯৭৬ সালে “বোবা কান্না” এতে আমরা বাংলাদেশ চলচিত্রের কল্পনাকে পেয়েছিলাম। আসলে কল্পনার বাবা আমাদের কক্সবাজারে কোন এক অফিসে চাকরী করতেন । কল্পনা নাচতে ,গাইতে এবং অভিনয় সব পারতো।“বোবা কান্না ”নাটকের নায়কের চরিত্রে ছিল অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তাফা গনী, অন্যান্য চরিত্রে অধ্যাপক আহসানুল করিম এবং তাঁর বড় ভাই গোলাম হাজান, তাঁর জেটাতো ভাই গোলাম নবী।১৯৬৩ সালে আমি আমার ওস্তাদ স.ম আবুব্ককর সিদ্দিকির সঙ্গীতায়তনের ছাত্র ছিলাম। সেই সুবাদে নাটকের শুরুতে একটি নজরূল গীতি গেয়েছিলাম। গানটি ছিল “ছাইল অম্বর ঘন মেঘে”। বিভিন্ন নাটকের কৌতুকাভিনয়ে আমার বন্ধু বর্তমান ওমান প্রবাসী শামশুল আলম ওরফে মিন্টু যিনি টেকপাড়াস্থ মরহুম ডাক্তার সলীম সাহেবের এর কনিষ্ঠ ছেলে ছিলেন তাঁর অভিনয় সবাইকে আনন্দ দিতো।
১৯৬৩ সালে “ছাত্র সংঘ” নামে একটি সংগঠন টেকপাড়ার তরুনদের নিয়ে গঠিত হয়।মরহুম আবুল পেশকার এর পৃষ্টপোষক ছিলেন। তার নেতৃত্বে“যদি এমন হতো” নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়।এতে অভিনয় করেছিলেন কলিমুল্লাহ, বদরু যিনি বর্তমান থিয়েটার কর্মী কালামের বড় ভাই। মরহুম কামাল মাস্টার যিনি টেকপাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।জনাব মোসলেম যিনি আবদুল্লাহ পেশকারের ভাই একজন দক্ষ সংগঠকের কাজ করতেন।
এরি মধ্যে টেকপাড়ার কিছু নাট্যানুরাগী যুবক মিলে “রংবেরং” নামে একটি নাট্য সংগঠন গড়ে তোলে। নাট্য সংগঠনের মূল উদ্দোক্তা ছিলেন এবং অগ্রনী ভুমিকা রেখেছিলেন ব্যংকার খোরশেদ আলম। সেই সংগঠনের পূরোধা ছিলেন প্রিন্সিপাল সিরাজুল মোস্তফা। সেই সংগঠনে আরো যারা ছিলেন তন্মধ্যে মোহাম্মদ আকতার শাহনেওয়াজ (শাহিন) আবুল কালাম, সানাউল্লাহ (ব্যাংকার), জসিম প্রফেসর, মুজিব (আগের টেকপাড়া নাজমা ফার্মেসীর মালিক), শাহ আলম শানু, আনোয়ার, মন্জুর, নজরুল (নজরুল আর্ট),, রাজা মিয়া, মোবারক এবং একমাএ নারী চরিত্রে শাহানাসহ আরো অনেকে । ঐতিহাসিক নাটক মীর কাশেম মঞ্চস্থের মাধ্যম রংবেরং নাট্যগোস্ঠীর যাএা শুরু। তারপর নাটক মঞ্চস্থ করে রাস্তার ছেলে । উভয় নাটক মঞ্চস্থ হয় টেকপাড়া প্রাইমারী স্কুল মাঠে। এসময় কল্যাণ মিত্রের লেখা “নকল মানুষ” নামে আরেকটি নাটক প্রথম পাবলিক লাইব্রেরীতে মঞ্চস্থ করে রংবেরং নাট্যহোস্ঠী। এখান থেকে রংবেরং নাট্যগোস্ঠীর অগ্রযাএা শুরু। তার পর পর মঞ্চস্থ করে ” এক যে ছিল দুই হুজুর ” হুজুর কখন মরবে “। এরপর ” সূ-বচন নির্বাসনে ” ও অরক্ষিত মতিঝিল সফলভাবে মঞ্চস্থ করে। তারপর মঞ্চস্থ হয় মাসুদ আলী খানের লেখা ” তৈল সংকট ” নাটক। এসব নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে রংবেরং নাট্যগোস্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত হয় বাহারছড়া থেকে জসীমউদ্দীন বকুল, আবুল কালাম( মরহুম জহীর মেম্বারের ছেলে), মুজিব ( জাতীয় পার্টির মফিজের বড় ভাই)। রংবেরং নাট্যগোস্ঠীর ব্যানারে সর্বশেষ নাটক মঞ্চস্থ হয়, নাট্যগোস্ঠীর অন্যতম সংগঠক খোরশেদ আলমের লেখা “আলীমুদ্দীনের দুঃস্বপ্ন “। মঞ্চে ও পথনাটক হিসেবে নাটকটি বহুবার মঞ্চস্থ হয় । তিনি বেশ কয়েকটি নাটক লিখেছিলেন তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলীমুদ্দীনের দুঃস্বপ্ন, পৃথিবীর ঘরে ঘরে, জনৈকের মহাপ্রয়াণ, মানবো না এ বন্ধনে, বোমা ও আদম সুরত। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ১৯৭৮ সালে প্রথম সম্মেলনে কক্সবাজার নাট্যগোস্ঠীর পক্ষে একমাএ তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি জানান প্রথম কমিটিতে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন রামেন্দু মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। তার লেখা নাটকের মধ্যে মানবো না এ বন্ধনে ও বোমা নাটক স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী পথ নাটক। “মানবো না এ বন্ধনে” নাটক মঞ্চস্থ করতে গিয়ে বারবার পুলিশের তাড়া খেতে হয়। নাটকটি একদিনে লিখেছেন বলে জানান। বংগবন্ধু সড়কে হোটেল ইউনাইটেড বোর্ডিংয়ে থাকতেন নজরুল ইসলাম বকশী। তার রোমে আড্ডার ছলে নাটকটি লিখা হয়। নাটকের প্লেব্যাক মিউজিকে ও সংগীত পরিচালনায় ছিলাম আমি। আদম সুরত নাটকটি কক্সবাজার শিল্পকলা একাডেমীর ব্যানারে বাংলাদেশ টেলিভিশনে মঞ্চস্থ হয়৷। রংবেরং নাট্যগোস্ঠীর আমন্ত্রণে ১৯৭৮ সনে কলকাতার স্বনামধন্য “লহরী শিল্পীগোস্ঠী ” কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি হলে রবীন্দ্রনাথের “চোখের বালি ” নাটক মঞ্চস্থ করে । আকাশ বাণী’র অনেক নামকরা শিল্পী অভিনয় করে। তাদের হোটেল পেনোয়া’য় রেখেছিল। রংবেরং নাট্যগোস্ঠীর প্রতিটি নাটকে থাকত হলভর্তি দর্শক। রংবেরং নাট্যগোস্ঠীর প্রতিটি নাটকের আবহ সংগীত পরিচালক ছিলাম আমি রায়হান উদ্দীন । আমার সহযোগিতায় ছিল দোলন চাঁপা এবং আলোকসজ্জায় জামাল হোসেন মনু । পরে এই সংগঠনের কর্মকর্তারা নাট্যসংগঠনটিকে বৃহত্তর পরিসরে নিয়ে যেতে চাইলে ”রং বেরং ”নাট্য সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে “ককসবাজার থিয়েটার” বলে ককসবাজারের অন্য এলাকার ছেলে সহ একটি বড় নাট্য সংগঠনে পরিচয় লাভ করে। হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, বেশ কয়েকটি সংগঠন তন্মধ্যে সমকাল, এক পা সামনে আরো কয়েকটি নাট্য সংগঠনের কর্ণধার ও অভিনেতা মিলে কক্সবাজার থিয়েটার জন্মলাভ করে ১৯৮৪ সালে। সংগঠনের উল্লেখযোগ্য অভিনেতাদের মধ্যে এডভোকেট তাপস রক্ষিত, এডভোকেট সৈয়দ রাশেদউদ্দীন, টাইডেল, ফারুক আহমদ রকি, বড়, রানা ও নজীব (বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা)সহ আরো অনেকে। ইত্যবসরে কক্সবাজার থিয়েটারে নতুন নতুন ছেলে মেয়ে যোগদানের জোয়ার আরম্ভ হ’ল। তারা হলেন জাহেদ( বিশিষ্ট ব্যাংকার), নজরুল ইসলাম বকশী, পরিতোষ (টি এন্ড টি), বাচ্চু, জুয়েল, সোহেল, সাংবাদিক তাহেরের শ্যালক সাইফুল, রবি, রিয়াদ, ডালিম , নীলু (সিকদার মহল), ডলি (বর্তমানে ঢাকায়), শুক্তি বড়ুয়া, জয়ন্তী বড়ুয়াসহ আরো অনেক। ককসবাজারে থিয়েটার প্রতিষ্ঠার প্রথম নাটক এস.এম. সোলাইমানের “ঈঙ্গিত ” মঞ্চস্থ করে। নাটক পরিচালনা করেন অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তফা ও খোরশেদ আলম ।এ নাটকে সিনিয়র অভিনেতা হিসেবে গোলাম কিবরিয়া অভিনয় করেন। আরো অভিনয় করেন মুক্তিযুদ্ধা শাহজাহান ও শাহজাহান ভাবী। সংগীত পরিচালক আমি ছিলাম এবং আধুনিক আলোকসজ্জার জন্য চট্টগ্রাম থেকে মাহমুদ আসে। তিনি আলোক সজ্জায় খ্যাতিমান। মঞ্চ সম্প্রসারণ করে নতুনত্ব আনা হয়, নির্দেশনা দেন খোরশেদ আলম। তার পর পরই আরেক সফল নাটক ” রাজনিদ্রা ” মঞ্চস্ত হয়। এ নাটক সফল করার লক্ষ্যে জসীমউদ্দিন বকুল ও খোরশেদ আলম কয়েকবার চট্টগ্রাম যাওয়া আসা করে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাট্য সংগঠক ও পরিচালক মাকসুদ ভাই, মশিয়ুর ভাইদের সহযোগিতায় নাটকের বিভিন্ন দিক নির্দেশণা’র জন্য অপু, তপু ও স্বপনকে নিয়ে আসা হয়। অপু নাটকের নির্দেশনা, তপু নাটকের নৃত্য নির্দেশনা ও স্বপন অভিনেতা অভিনেত্রী’র ড্রেস ও মঞ্চের অন্যান্য সাজসজ্জার নির্দেশনা প্রদান করেন। খোরশেদ আলম জানান, ১৯৯৬ সালে কলিকাতা বেড়াতে গেলে সেখান থেকে মনোজ মিএের নাটকের বই তিতির মৌ নিয়ে আসেন। নাটকটি আধুনিক ধাঁচে কিছুটা রদবদল করে নাম দেন “টু ইডিয়টস ” এবং পরিচালনা’র দায়িত্ব দেন স্বপন ভট্টাচার্যকে। তিনি নাটকটি আরো যুগোপযোগী করে সফল মঞ্চায়ন করেন। এবং অনেকবার মঞ্চস্থ হয় নাটকটি। এই নাটকে তাপস রক্ষিত ও পরিতোষ টু ইডিয়টস চরিত্রে সেরা অভিনয় করে । এখানে উল্লেখ্য যে, জংগীবাদ বিরোধী সফল নাটক ” রয়েল বেঙ্গল টাইগার ” সফলভাবে বহুবার বহুস্থানে অভিনীত হয় । উল্লেখিত অভিনেতাগণ তাদের সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে যে নাটকে যার প্রয়োজন সেভাবে অভিনয়ের মাধ্যমে থিয়েটারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সফলতার সহিত দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন জসীমউদ্দিন বকুল ও বরাবরই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন প্রিন্সিপাল সিরাজুল মোস্তফা।
১৯৮৬ সালে পাবলিক লাইব্রেরীতে কক্সবাজার থিয়েটার এর নাটক ‘ইংগিত’ এর একটি দৃশ্যে
এর মধ্যে টেকপাড়ার আরেকজন গুনী নাট্য প্রযোজক, লেখক মোহাম্মদুল হক (ভাইয়া) র নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। তিনি টেকপড়ায় আঞ্চলিক নাটকে বিশেষ ভুমিকা রেখেছিলেন। তাঁর লেখা “পানওয়ালী” বার্মাইয়া সুন্দরী” সহ বেশ কয়েকটি নাটক পাবলিক লাইব্রেরীতে সফল মঞ্চায়ন হয়। এতে বর্তমান রেহানা ইলেক্ট্রিকের সত্বাধীকারী জামাল হোসেন মনু সহ অনেকে অভিনয় করেন। তাছাড়া তিনি “সাম্পান ওয়ালা’ নাটকটিও মঞ্চায়ন করেন। পরে তিনি দুবাই চলে যান। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা য়ায় ঐ দুবাইয়েও তিনি সফল নাট্য মঞ্চায়ন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে উন্নত ভুমিকা রেখেছিলেন। বেশ কয়েকবছর হয় তিনি ওখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন।
পরিশেষে বলা যায় ককসবাজার তথা স্বাধীনতাউত্তর গনতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে টেকপাড়ার অবদান অপরিসীম ছিল। কালের আবর্তনে তা হারিয়ে গেছে।

- আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতোন উত্থান শহরের দঃ রুমালিয়ার ছড়ার রফিকের
- শহরে ইয়াবা সম্রাট রফিকের হামলায় আহত অছিউর রহমান ও তার স্ত্রী
- দঃ রুমালিয়ার ছড়ার রফিকের আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার নেপথ্যে কাহিনী !
- লাখো পর্যটকে মুখর কক্সবাজার সৈকত
- স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।
ঢাকার আকাশে উড়বে ৮০০ ড্রোন - দেরিতে সবজি উৎপাদনের সুফল ভোক্তার পকেটে
- গ্রামেও মিলবে নিরাপদ পানিঃ নয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প
- দেশের এক শতাংশ নাগরিক টিকার আওতায়
- বিশ্বে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির শীর্ষ তিনে বাংলাদেশ
- আল-জাজিরাঃ মিথ্যাচারের মধুচন্দ্রিমা
- যান চলাচলের জন্য দ্রুত উপযোগী হচ্ছে পদ্মা সেতু
- ঢাকা উত্তর সিটির সঙ্গে যুক্ত ১৮ ওয়ার্ড হবে আধুনিক নগর
- দেশে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ সৌদির
- দেশি মাছ সংরক্ষণে লাইভ জিন ব্যাংক
- সুরক্ষা অ্যাপের কারণে ভ্যাকসিন কার্যক্রম আরও একধাপ এগিয়ে গেলো
- দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশের : মার্কিন রাষ্ট্রদূত
- ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী-
লাভের জন্য মানুষের ক্ষতি করবেন না - গর্জনিয়াতে হাফেজ শিশুদের শীতবস্ত্র দিলেন রামু’র ইউএনও
- টেকনাফ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকের ঢল !
- ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে- এড. সিরাজুল মোস্তফা
- ফাগুনে মেরিন ড্রাইভ সেজেছে, পলাশ-শিমুলের অপরূপ সাজে
- কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ক্বেরাত সম্মেলন ১৩ মার্চ
- ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করল সরকার
- প্রাথমিকে ২৬ হাজার স্কুল জাতীয়করণের সুপারিশ
- খাদ্যের জন্য হাত পেতে চলতে চাই না, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা চাই
- যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, সবাই ভ্যাকসিন পাবেন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- ভাষা শহীদদের সম্মানে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলায় রায়
- প্রায় ১৬ লাখ মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন
- আলজাজিরা ডকুমেন্টারি: কথিত ‘ব্যবসায়ী’ ফ্রিডম মোস্তফা কতটা নিরপরাধ
- চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ঝুঁকি কমাতে হচ্ছে বাইপাস ফ্লাইওভার

- মেয়ে সেজে ইনস্টাগ্রামে ছবি, তারপর...
- ‘সব থেকে বড় সম্ভাবনার নাম শেখ হাসিনা’
- উপরে নীল আকাশ নিচে নীল সমুদ্র
- অরিত্রির আত্মহত্যা ও ভিকারুননিসা!
- বিজয়ের স্মৃতি ও বঙ্গবন্ধু
- শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন | তোফায়েল আহমেদ
- বাংলাদেশের ইতিহাস আওয়ামী লীগের ইতিহাস:তোফায়েল আহমেদ
- চাই প্রকৃত শিক্ষা, প্রকৃত মানুষ
- মি টু’র উদ্দেশ্য, অতঃপর...
- ইকোনমিস্টের মতে আওয়ামী লীগ নিশ্চিত ক্ষমতায় আসছে
- এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে ভাবনা।। মুহম্মদ জাফর ইকবাল
- টি-শার্টে আর কী কী লেখা উচিত, জানালেন তসলিমা নাসরিন
- বিএনপির শুভবুদ্ধি অথবা বুদ্ধিবিনাশ
- বিজয়ের আনন্দ, প্রত্যাশা পূরণের প্রজ্ঞা
- বড় অভিমান নিয়ে চলে গেলেন তারামন বিবি